২য় আসরঃ অধ্যায়ঃ ০২, সিয়াম পালনের অন্যতম ফযীলত
২য় আসর
অধ্যায়ঃ ০২
সিয়াম পালনের অন্যতম ফযীলত
ইফতারের সময় আনন্দ: ‘সিয়াম পালনকারী সর্বোত্তম নেক আমলের অন্যতম ইবাদত সাওম সম্পন্ন করার কারণে আল্লাহ তার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন এ জন্য আনন্দ প্রকাশ করে।
কারণ বহু মানুষ এমন রয়েছে যারা এ অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে; কেননা তারা সাওম পালন করে নি। বরং পানাহার ও স্ত্রী সহবাস যা আল্লাহ তার জন্য অন্য অবস্থায় হালাল করেছেন কিন্তু সাওম অবস্থায় হারাম করেছেন, তা দিয়ে (অবৈধ) আনন্দ-উদযাপনে লিপ্ত।
আল্লাহর দিদার লাভের সময় আনন্দ: ‘যখন একজন সাওম পালনকারী তার অতি দরকারী মুহূর্তে আল্লাহর কাছ থেকে পরিপূর্ণ প্রতিদান পাবে তখন সাওমের কারণে আনন্দ প্রকাশ করবে। যখন বলা হবে:
«أَيْنَ الصَّائِمُونَ لَيَدْخُلُوا الجنة مِنْ بَاب الريان الذي لاَ يَدْخُلُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ».
‘সাওম পালনকারীরা কোথায়? তারা রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে যেন জান্নাতে প্রবেশ করে, ওই দরজা দিয়ে সাওম পালনকারীরা ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।
উপরোক্ত হাদীসে সাওম পালনকারীর জন্য একটি দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে কিংবা তার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে চায় সে তার অনুরূপ ভূমিকা নেবে না। যাতে না গাল-মন্দ ও সংঘর্ষ বেড়ে যায়, আবার নীরবতা অবলম্বন করে নিজেকে দুর্বল হিসেবেও প্রকাশ করবে না। বরং বলবে ‘আমি তো রোযাদার।’ যাতে ইঙ্গিত করা হয় যে, প্রতিশোধ গ্রহণে অক্ষমতার জন্য নয়, বরং সাওমের সম্মানার্থে ঐ ব্যক্তির অনুরূপ আচরণে সে লিপ্ত হবে না। আর এভাবে ঝগড়া-বিবাদ ও সংঘাত বন্ধ হয়ে যাবে।
﴿ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ فَإِذَا ٱلَّذِي بَيۡنَكَ وَبَيۡنَهُۥ عَدَٰوَةٞ كَأَنَّهُۥ وَلِيٌّ حَمِيمٞ ٣٤ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ٱلَّذِينَ صَبَرُواْ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٖ ٣٥ ﴾ [فصلت: ٣٤، ٣٥]
‘তুমি উত্তম পন্থায় প্রত্যুত্তর করো। ফলে তোমার সাথে এবং যার সাথে তোমার শত্রুতা রয়েছে সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যায়। ধৈর্যশীল ব্যতিরেকে কেউ তা করতে সক্ষম হয় না এবং ভাগ্যবান ব্যক্তি ছাড়া কেউ তা লাভ করতে পারবে না।’ (সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৪-৩৫)
৪. সিয়াম পালনকারীর জন্য কিয়ামতের দিন সিয়াম সুপারিশ করবে:
আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، يَقُولُ الصِّيَامُ: أَيْ رَبِّ، مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ، فَشَفِّعْنِي فِيهِ، وَيَقُولُ الْقُرْآنُ: مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ، فَشَفِّعْنِي فِيهِ ، قَالَ: «فَيُشَفَّعَانِ»
‘সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে পানাহার ও যৌনাচার হতে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, হে আল্লাহ! আমি রাতের ঘুম থেকে তাকে বিরত রেখেছি, সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।’[7]
প্রিয় ভাইয়েরা! সিয়ামের উল্লেখিত ফযীলত ওই সকল ব্যক্তির জন্য, যারা গুরুত্বসহ এবং আদবের সঙ্গে সিয়াম পালন করে। নিজেদের সিয়ামকে নিখুঁত রাখতে এবং তার বিধিবিধান পালনে চেষ্টা করুন আর আপনারা নিজেদের সাওমে ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করুন।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সিয়াম সংরক্ষণ করুন, সিয়ামকে সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করুন এবং আমাদের, আমাদের পিতা-মাতা ও মুসলিম উম্মাহকে ক্ষমা করুন।আর আল্লাহ সালাত ও সালাম প্রদান করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের ওপর।
[ রেফারেন্স সমূহঃ ]
[1] বুখারী: ৩৮; মুসলিম: ৭৬০।
[2] মুসলিম: ২৩৩।
[3] বুখারী: ১৯০৪; মুসলিম: ১১৫১।
[4] মুসলিম: ১১৫১।
[5] মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব: ২/৭। অর্থাৎ সিয়াম দ্বারা জুলুমের প্রতিকার করবেন না। সেটাকে ব্যক্তির অক্ষয় আমল হিসেবে হেফাযত করবেন। [সম্পাদক]
[6] মুসনাদ আহমাদ: ১৫২৬৫। হাসান সূত্রে বর্ণিত।
[7] আহমাদ: ৬৬২৬।
[ সিয়ামের বিধান ]
No comments